ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্ম হয় ১৯৭১ সালে। তারও ১৫ বছর পর ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ ওয়ানডে ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাম। এশিয়া কাপের ওই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। শুরুটা হার দিয়ে হলেও সেটি ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে বাঁকবদলের লগ্ন। ওই দিনটিই বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বপ্ন দেখার সূচনা। সেই থেকে দেখতে দেখতে কেটে গেছে ৩৪ টি বছর। এক-দুই-তিন করে বাংলাদেশ খেলে ফেলেছে ৩৭৬টি ওয়ানডে ম্যাচ। অন্য দুই ফরম্যাটের চেয়ে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মোরাতুয়াতে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ দল। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সাত ম্যাচে তার নেতৃত্বেই মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। লিপুর নেতৃত্বে প্রথম ম্যাচটিতে আগে ব্যাট করে ৯৪ রানে অলআউট হওয়ার পর ৭ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ।
১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ শ্রীলঙ্কায় প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার পর জয় পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ২২ টি ম্যাচ। ১২ বছর পর ১৯৯৮ সালে ভারতের হায়দরাবাদে কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে জয় লাভ করে বাংলাদেশ। লিপু যা পারেননি, তাই করে দেখিয়েছেন আকরাম খান। যদিও জয়ের পুরো কৃতিত্ব মোহাম্মদ রফিকের। তার অলরাউন্ডস পারফরম্যান্সে বাংলাদেশ তাদের প্রথম জয়টি পায়।
এরপর একটু একটু করে করে বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশের রঙ বদলাতে শুরু করে। কখনো উজ্জ্বল ঝকঝকে আকাশ আবার কখনো বা ঘন কালো মেঘে ঢেকে যাওয়া। তবে এই মুহুর্তে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশে দূর্দান্ত একটি দলে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল অধিনায়ক সদ্যই সাবেক হওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৮৮ টি ম্যাচ দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জয়ের হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৪জন অধিনায়ক বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রথম অধিনায়ক ছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। এরপর একে একে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিনহাজুল আবেদিন, আকরাম খান, আমিনুল ইসলাম, নাঈমুর রহমান, খালেদ মাসুদ, খালেদ মাহমুদ, হাবিবুল বাশার, রাজিন সালেহ, মোহাম্মদ আশরাফুল, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি মুর্তজা ও মুশফিকুর রহিম। এই মুহুর্তে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবালের কাঁধে বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের দায়িত্ব। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে তিনটি ওয়ানডে খেলেছে।
অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির পর ওয়ানডেতে দলকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন হাবিবুল বাশার। ৬৯ ম্যাচে ২৯ জয়ে বাশার দ্বিতীয় সেরা অধিনায়ক। সাকিব আল হাসান ৫০ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ২৩ জয়ে পেয়ে তৃতীয় সেরা অধিনায়ক তিনি।
১৯৮৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরুর ১৩ বছর পর প্রথমাবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। প্রথম আসরে স্কটল্যান্ডকে হারানোর পর শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বক্রিকেটে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভূমিকা রাখে ২০০০ সালেই বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তিতে।
অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় একদিনের ক্রিকেটেই বেশি উজ্জ্বল বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। সবমিলিয়ে ৩৭৬ ওয়ানডে খেলা বাংলাদেশের জয় ১২৮ ম্যাচে। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি জিতেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। জিম্বাবুইয়ানদের সঙ্গে ৭৫ ওয়ানডে খেলে ৪৭টিতে জয়ের স্বাদ নিয়েছেন লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। বড় দলগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০টি ওয়ানডে জিতেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লাল-সবুজের জার্সিধারীদের জয় ১৫ ম্যাচে। এছাড়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাতটি, ভারতের ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পাঁচটি , দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চারটি করে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে খেলার রেকর্ড সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমের। মাশরাফির মতো মুশফিকেরও ম্যাচের সংখ্যা ২১৮। তামিম ইকবাল খেলেছেন ২০৭টি ম্যাচ। সাকিব আল হাসান ২০৬টি এবং মাহমুদউল্লাহ ১৮৮ টি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি তামিমের (১৩টি)। সাকিবের ৯টির পাশাপাশি মুশফিকের সেঞ্চুরির সংখ্যা ৭টি।
দীর্ঘ ৩৪ বছরে খুব বেশি প্রাপ্তি না থাকলেও তামিম-সাকিব-ও মুশফিকদের মতো ক্রিকেটাররা দেশের বড় সম্পদ হয়ে উঠেছেন। আর ২০১৫ বিশ্বকাপের পর দলে সুযোগ পাওয়া লিটন-সৌম্য-মোস্তাফিজ-মিরাজরা নিজেদের তৈরি করছেন।
2024 @ Gameon